, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের কাছে হেরেও ‘বড় গলা’ মোদির

  • প্রকাশের সময় : ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • ১২ পড়া হয়েছে

 

অনলাইন ডেস্ক

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এবার তার নিজের দেশের রাজনীতিকরাই সরব। কেউই বলছেন না যে ভারত যুদ্ধে জিতেছে। বরং তারা বলছেন, এই যুদ্ধে ভারত হেরেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস, শিবসেনা, এমনকি কিছু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরাও।

 

শনিবার (১০ মে) পাকিস্তানের হামলার পর ভারত পাল্টা জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে ছিল। এ নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। পরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় মোদির নেতৃত্ব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে চরম ক্ষোভ। অনেকে মোদিকে একরকম ‘পরাজিত নেতা’ বলেই অভিহিত করছেন। শিক্ষাবিদরাও বলছেন, এই যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে বিজেপির আদর্শকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এসব সমালোচনার মধ্যেই সোমবার (১২ মে) রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি। তিনি জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান ভারতের সেনার কাছে মার খেয়ে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে। কিন্তু ভাষণে তার শরীরী ভাষা ও কণ্ঠের জোরে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল বলে মন্তব্য এসেছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও।

 

পাকিস্তানের সিনেটর ইরফান সিদ্দিকী বলেন, মোদির চেহারা দেখে মনে হয়েছে তিনি এক পরাজিত নেতা। এমনকি ভারতেরই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলেন, মোদি শুধু সামরিকভাবে নয়, আদর্শিকভাবেও পরাজিত হয়েছেন। ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এই সংকট তৈরি করেছে। এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে (ডিজিএমও স্তরে) বৈঠক হয়। এতে দুই দেশ প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোনো হামলা চালাবে না, ড্রোনও পাঠাবে না। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে ছিলেন লে. জেনারেল রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ।

 

‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ ঠেকিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দাবি ট্রাম্পের : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর উত্তেজনা প্রশমিত করার সময়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে একটি ‘খারাপ পারমাণবিক যুদ্ধ’ রোধ করেছে। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইসলামাবাদের সাথে আরও সংঘর্ষের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ সহ্য করবে না।

 

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মন্তব্য, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে মার্কিন কূটনৈতিক মধ্যস্থতার একটি বিরল মুহূর্তকে ইঙ্গিত করে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে শান্তিকে সংযুক্ত করে এমন একটি বৃহত্তর আমেরিকান কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। ‘আমরা একটি পারমাণবিক সংঘাত বন্ধ করেছি। আমার মনে হয় এটি একটি খারাপ পারমাণবিক যুদ্ধ হতে পারত। লাখ লাখ মানুষ নিহত হতে পারত,’ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন। এটি সম্ভবত মার্কিন নেতার সবচেয়ে তীব্র সতর্কবার্তাগুলির মধ্যে একটি, যিনি বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি তুলে ধরার ক্ষেত্রে খুব কমই কথা বলেছেন। তার মন্তব্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভঙ্গুর শান্তি সম্পর্কে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে, যাদের উভয়েরই উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে এবং সামরিক সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

 

হামলার ভয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর একাধিক ফ্লাইট বাতিল : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে বিমান পরিষেবাতেও। দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি সমঝোতা হলেও গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর তরফে একাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে মঙ্গলবার, ১৩ মে বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে। পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।’

 

ইন্ডিগোর তরফেও বিমান বাতিল নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল জম্মু, শ্রীনগর, অমৃতসর, চ-ীগড় সহ অনেক সীমান্তবর্তী শহরে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে জম্মু, লেহ, যোধপুর, অমৃতসর, ভুজ, জামনগর, চ-ীগড় এবং রাজকোটের একাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে, ইন্ডিগো জম্মু, অমৃতসর, চ-ীগড়, লেহ, শ্রীনগর এবং রাজকোটের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য সোমবারই, ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) ৩২টি বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার ঘোষণা করেছে। সূত্র : আল-

জাজিরা, ডন, টিওআই।

 

পাকিস্তানের কাছে হেরেও ‘বড় গলা’ মোদির

প্রকাশের সময় : ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

 

অনলাইন ডেস্ক

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এবার তার নিজের দেশের রাজনীতিকরাই সরব। কেউই বলছেন না যে ভারত যুদ্ধে জিতেছে। বরং তারা বলছেন, এই যুদ্ধে ভারত হেরেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস, শিবসেনা, এমনকি কিছু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরাও।

 

শনিবার (১০ মে) পাকিস্তানের হামলার পর ভারত পাল্টা জবাব না দিয়ে চুপ করে বসে ছিল। এ নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। পরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় মোদির নেতৃত্ব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে চরম ক্ষোভ। অনেকে মোদিকে একরকম ‘পরাজিত নেতা’ বলেই অভিহিত করছেন। শিক্ষাবিদরাও বলছেন, এই যুদ্ধ রাজনৈতিকভাবে বিজেপির আদর্শকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এসব সমালোচনার মধ্যেই সোমবার (১২ মে) রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি। তিনি জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান ভারতের সেনার কাছে মার খেয়ে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে। কিন্তু ভাষণে তার শরীরী ভাষা ও কণ্ঠের জোরে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল বলে মন্তব্য এসেছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও।

 

পাকিস্তানের সিনেটর ইরফান সিদ্দিকী বলেন, মোদির চেহারা দেখে মনে হয়েছে তিনি এক পরাজিত নেতা। এমনকি ভারতেরই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলেন, মোদি শুধু সামরিকভাবে নয়, আদর্শিকভাবেও পরাজিত হয়েছেন। ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এই সংকট তৈরি করেছে। এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে (ডিজিএমও স্তরে) বৈঠক হয়। এতে দুই দেশ প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোনো হামলা চালাবে না, ড্রোনও পাঠাবে না। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে ছিলেন লে. জেনারেল রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ।

 

‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ ঠেকিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দাবি ট্রাম্পের : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর উত্তেজনা প্রশমিত করার সময়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে একটি ‘খারাপ পারমাণবিক যুদ্ধ’ রোধ করেছে। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইসলামাবাদের সাথে আরও সংঘর্ষের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ সহ্য করবে না।

 

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মন্তব্য, দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে মার্কিন কূটনৈতিক মধ্যস্থতার একটি বিরল মুহূর্তকে ইঙ্গিত করে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে শান্তিকে সংযুক্ত করে এমন একটি বৃহত্তর আমেরিকান কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। ‘আমরা একটি পারমাণবিক সংঘাত বন্ধ করেছি। আমার মনে হয় এটি একটি খারাপ পারমাণবিক যুদ্ধ হতে পারত। লাখ লাখ মানুষ নিহত হতে পারত,’ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন। এটি সম্ভবত মার্কিন নেতার সবচেয়ে তীব্র সতর্কবার্তাগুলির মধ্যে একটি, যিনি বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি তুলে ধরার ক্ষেত্রে খুব কমই কথা বলেছেন। তার মন্তব্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভঙ্গুর শান্তি সম্পর্কে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে, যাদের উভয়েরই উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে এবং সামরিক সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

 

হামলার ভয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর একাধিক ফ্লাইট বাতিল : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে বিমান পরিষেবাতেও। দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি সমঝোতা হলেও গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর তরফে একাধিক বিমান বাতিল করা হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে মঙ্গলবার, ১৩ মে বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে। পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।’

 

ইন্ডিগোর তরফেও বিমান বাতিল নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল জম্মু, শ্রীনগর, অমৃতসর, চ-ীগড় সহ অনেক সীমান্তবর্তী শহরে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে জম্মু, লেহ, যোধপুর, অমৃতসর, ভুজ, জামনগর, চ-ীগড় এবং রাজকোটের একাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে, ইন্ডিগো জম্মু, অমৃতসর, চ-ীগড়, লেহ, শ্রীনগর এবং রাজকোটের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য সোমবারই, ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) ৩২টি বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার ঘোষণা করেছে। সূত্র : আল-

জাজিরা, ডন, টিওআই।