
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাজধানীর ক্লাবপাড়ার সব জুয়ার আস্তানা তছনছ হলেও কয়েক বছর ঘুরতেই ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এ চক্র। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এ চক্রের মাফিয়ারা অনেকেই থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে গা ঢাকা দিলেও চক্রটির একাধিক সদস্য রাজধানীতে চালিয়ে আসছে জুয়ার আসর।
জুয়ার বোর্ড পরিচালনকারী একাধিক ব্যক্তি ও বিপুলসংখ্যক জুয়ারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাবপাড়ায় জুয়া বন্ধ থাকলেও রাজধানীতে এ খেলা মোটেই থেমে নেই। রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকার আলাতুন্নেসা স্কুল রোডে অবস্থিত বাড্ডা জাগরণী ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্পোর্টিং ক্লাবের অন্তরালে আওয়ামী দোসর ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদের সহযোগী সোহেল ও মাসুদ সিন্ডিকেট জাগরণী ক্লাবের ২র্য় তলা ও নিচ তলায় আবারো জমজমাট ভাবে শুরু হয়েছে আন্ধার বাহার নামক ক্যাসিনো জুয়া ।
হিউম্যান রাইটস হেলথ ফাউন্ডেশন এর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, বর্তমানে বিএনপি রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হাত করে আবারো শুরু করেছেন বাড্ডা জাগরণী ক্লাবে আন্দার বাহার নামক ক্যাসিনো জুয়া এই ক্লাবের সভাপতি প্রভাবশালী বিএনপি নেতা থাকায় নির্বিঘ্নে চালিয়ে আসছে আওয়ামী দোসর ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদের সহযোগী সোহেল ও মাসুদ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে ক্যাসিনো জুয়া ।
এই জুয়ার আসরে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। কাটাকাটি, তিনকার্ড, ফ্লাস, গেমবোর্ড, গেম, হাইডু ও হাজারি খেলা চলছে এখানে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বাড্ডা থানা পুলিশ নিয়মিত মোটা অংকের অর্থ নিয়ে থাকে। বর্তমানে বাড্ডা জাগরণী ক্লাব জুয়ারীদের কাছে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে মনে করেন জুয়ারীরা এছাড়াও বাড্ডা থানার অফিসার্স ইনচার্জকে একাধিকবার অবগত করলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না । যদিও মাঝে লোক দেখানো পুলিশ গেলেও ক্যাসিনো জুয়া নিয়ন্ত্রণকারী সোহেল ও মাসুদকে আগে থেকেই অবগত করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে কালের বার্তা অনুসন্ধানে করলে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড্ডা আলাতুন্নেসা স্কুল রোডের একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ জাগরণী ক্লাবের ক্যাসিনো জুয়ার জন্য এলাকায় বসবাস করা নিরাপদ নয় রাতে বহিরাগত শতশত মানুষের যাতায়াত ও মাদক সেবিদের আনাগোনা ও জাগরণী ক্লাবের পাশেই মসজিদ থাকা সত্ত্বেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ বাড্ডা থানার ওসি ম্যানেজ করেই চালিয়ে আসছে ক্যাসিনো জুয়া ।
বাড্ডা জাগরণী ক্লাবে খেলাধুলা ও সামাজিক মূলক কর্মকাণ্ড করে থাকতো ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই প্রভাবশালী বিএনপি নেতা সভাপতি হওয়ার পর থেকেই জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে আর এই জুয়া ও মাদকের টাকার ভাগিদার রয়েছেন অনেকেই। প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন
এছাড়াও একাধিক সূত্র জানায়, বাড্ডা জাগরণী ক্লাবে ক্যাসিনো জুয়া পরিচালনা করে একাধিক ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক হয়েছেন আওয়ামী দোসর ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদের সহযোগী সোহেল গং । রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজ নামে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য তিন থেকে চার কোটি টাকা করে। এ ছাড়া ক্যাসিনো জুয়ার টাকায় তিনি একটি হাউজিং কোম্পানি খুলে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন শত কোটি টাকার মালিক ক্যাসিনো সোহেল
এবিষয়ে হিউম্যান রাইটস হেলথ ফাউন্ডেশন এর সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার শাহীন আলম জানতে চাইলে তিনি কালের বার্তা”কে বলেন,আইনের দৃষ্টিতে জুয়া খেলা শুধু একটিমাত্র শাস্তি মূলক অপরাধ হলেও এটিকে ঘিরে আরও অনেক অপরাধের জন্ম হচ্ছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি থেকে শুরু করেপারিবারিক সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির নেপথ্যে জুয়া অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন সম্প্রতি সময়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ বলেন ,অপরাধ ধনী ও দরিদ্রের ক্ষেত্রে সমান। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে- কারও সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। আদালত আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো উচিত। আদালত প্রত্যাশা করেন, সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।মহানগর এলাকায় জুয়া খেলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ দেন স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এখন যদি বাড্ডা থানার অফিসার্স ইনচার্জ এই আদেশ পালন না করে তার নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য জুয়ার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে থাকে তাহলে তার স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগকে অপমান করেছেন ।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থানার অফিসার্স ইনচার্জের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোন রকম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নেই।