
স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ওয়ারী থানাধীন সায়েদাবাদ সাবেক শিশু পার্কে অঞ্চল ভিত্তিক বর্জ্য পরিবহন স্ট্যান্ডে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জুয়া, মাদক সেবন ও সংশ্লিষ্ট অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে—এমন অভিযোগে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বজ্য পরিবহন স্ট্যান্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতেই হাতের বাম দিকের শেষাংশে তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি ছোট রুম; স্থানীয়দের দাবি, এসব রুমেই সন্ধ্যার পর শুরু হয় এক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত অপরাধের আড্ডাখানা।
একজন বর্জ্য পরিলিবহন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—
“আমরা তো সরকারি কাজ করি। কিন্তু সন্ধ্যার পর যারা আসে তারা কেউই সিটি কর্পোরেশনের লোক না। ওদের উদ্দেশ্য ভালো না—এরা সবাই জুয়া খেলতে আসে কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না।”
এই জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে আলমগীর নামক এক ব্যক্তি
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দিনের বেলায় স্ট্যান্ডটি স্বাভাবিকভাবেই বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হলেও সন্ধ্যা নামার পরেই পরিবেশ সম্পূর্ণ বদলে যায়।
অচেনা মুখ, বাইরের লোকজনের জমায়েত, নীরবে রুমের দিকে যাতায়াত, এবং রাত ১১টার পর আরও বেশি মানুষের আনাগোনা—এসব দৃশ্য এখন নিত্যদিনের বিষয়।
অভিযোগ উঠলেও ডিএসসিসির কর্মকর্তারা দায়িত্বশীলভাবে জানান, এসব অবৈধ কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের কোনো কর্মী জড়িত নয়। একজন কর্মকর্তা বলেন:
“যদি সরকারি স্থাপনার ভেতরে কোনো বেআইনি কার্যক্রম চলে, সেটা সম্পূর্ণ অপরাধ।
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত তদারকি করি। এ ধরনের অভিযোগ লিখিতভাবে পেলে তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করা হবে।”
রুমগুলোর ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ
স্থানীয়দের মতে, স্ট্যান্ডের বাম পাশের শেষ অংশে বেশকিছু রুম তৈরি করা হয় মূলত বিশ্রাম ও কাজের সুবিধার জন্য। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এসব রুমে সন্ধ্যার পর আলো জ্বলে, দরজা বন্ধ হয়, এবং বাইরে দাঁড়ানো কয়েকজন ‘নির্বাচিত ব্যক্তির’ অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারে না।
কেউ ঢুকতে চাইলে “ভিতরে জায়গা নেই” বা “মিটিং চলছে”—এমন নানা অজুহাত দেওয়া হয়।
জুয়া ও মাদক একই সুতোয় গাঁথা
স্থানীয় একজন দোকানি জানান—
“সহজেই বোঝা যায়, ভিতরে শুধু জুয়া চলে না। মাদকও থাকে। মাঝে মাঝে ঝগড়া, হৈচৈ, বাইক বা গাড়ির শব্দে রাত জেগে থাকতে হয়। ভয় লাগে যে কোনো সময় কিছু একটা হয়ে যাবে।”
অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এসব আসরের কারণে আশপাশের কিশোর এবং বেকার যুবকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
অন্ধকারেই বেশি কার্যক্রম, অভিযোগ স্থানীয়দের
অভিযোগ অনুযায়ী, রাত্রি ১২টার পরই সবচেয়ে বেশি জমায়েত দেখা যায়।
কেউ কেউ দাবি করেন, “রংবেরংয়ের মোটরসাইকেল আসে, দু-তিনজন করে ঢোকে, আবার দ্রুত বের হয়। কিছুক্ষণ পর অন্য দল আসে।”
এমন গোপনীয়তা ও রুটিন মেনে চলা স্থানীয়দের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর প্রয়োজন
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কয়েকবার মৌখিক অভিযোগ করা হলেও এখনও কোনো বড় ধরনের অভিযান হয়নি।
একটি দায়িত্বশীল পুলিশ সূত্র জানায়—
“অভিযোগগুলো যাচাই করা হচ্ছে। যদি নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়দের জোর দাবি: দ্রুত অভিযান চাই
এলাকাবাসী জানিয়েছেন—
✔ সরকারি স্থাপনা অপরাধীদের দখলে যাওয়া বরদাস্ত করা যায় না
✔ জুয়া ও মাদক—দুটিই এলাকাকে অপরাধপ্রবণ এবং অস্থিতিশীল করে তুলছে
✔ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অভিযানের মাধ্যমে আস্তানা সরিয়ে দেওয়া জরুরি
একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা বলেন—
“এ ধরনের অপরাধমূলক আসর ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও সমস্যা দেখা দেবে।”
এ বিষয়ে জানতে ওয়ারী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আশ্বাস দেন তিনি।









